সনাক বাগেরহাট’র উদ্যোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২ উপলক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সামনে রবিবার (০৫ জুন) বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয়।

সনাক বাগেরহাট এর সভাপতি অ্যাডভোকেট রাম কৃষ্ণ বসু এর সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সনাকের পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির আহবায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্য হতে বক্তব্য রাখেন সনাক সহ-সভাপতি ফরিদা রহমান, অ্যাডভোকেট এস. এম. নওরোজ মহীত, সনাক সদস্য অধ্যক্ষ সইফ উদ্দিন আহমদ, তহুরা হোসেন, ফিরোজা নাসরিন ডলি, সাবেক সজন সদস্য অসীমা ঘোষ, এফ. এম. মোস্তাফিজুল হক, মহিলা পরিষদ বাগেরহাট জেলা শাখার তহমিনা বেগম, ইয়েস সহ-দলনেতা শারমিন আক্তার প্রিয়া প্রমুখ।

বক্তাগণ বলেন, নিজেদের স্বার্থে নিজেদেরকেই পরিবেশকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবেশ সুন্দর ও সুস্থ না রাখতে পারলে আমাদের জীবন আরো দুর্বিসহ হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ কার্বন নি:সরণের জন্য দায়ী না হয়েও আমরা এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করছি। কাজেই যেসকল দেশ অতিরিক্ত কার্বন নি:সরণের জন্য দায়ী তাদের অবশ্যই ন্যায্য ক্ষতি পূরণ অনুদান হিসেবে দিতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে নদীর তীরে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা হচ্ছে এবং নদীতে ময়লা ফেলে নদী দুষণ করা হচ্ছে। নাগরিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের নদীকে দুষণমুক্ত এবং শহরকে ময়লা আবর্জনা মুক্ত রাখতে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। একটাই পৃথিবী, একটাই বাংলাদেশ। তাই পরিবেশ সংক্রান্ত আইন ও নীতির কার্যকর প্রয়োগই পারে প্রকৃতির সাথে ভারসাম্য রেখে জীবনযাপন এবং বাংলাদেশের টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে। আর এজন্য প্রয়োজন পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রমে ¯^চ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ। যার মাধ্যেমে পরিবেশের জন্য টেকসই এবং সাশ্রয়ী ও বিকল্প উন্নত জীবন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব। মানববন্ধন কর্মসূচি হতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২২ সামনে রেখে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধাচার নিশ্চিতে টিআইবি’র দাবিসমূহ উত্থাপন করা হয়: বন ও জলাভূমিসহ পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করার সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুসারে নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটিয়ে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে; পরিবেশ দূষণ রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে সম্পাদনে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; পরিবেশ সুরক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সকল পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, আদিবাসী এবং নারীসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কার্যক্রম বাস্তবায়নে তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে; সঠিক পরিকল্পনাসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে প্রণোদনা ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের উপর ‘কার্বন ট্যা·’ আরোপ করতে হবে; বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ¦ালনির ব্যবহার বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানির প্রসারে একটি সল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করে প্রশমন বিষয়ক কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে; এখাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে; পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনসহ আইন প্রয়োগে সকল প্রকার ভয়, চাপ ও আর্থিক প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে দূষণের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে; বন, নদী, জলাশয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অবৈধ দখলের সাথে জড়িতদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষতি রোধ এবং জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ নির্মীয়মান কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে; টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সকল উন্নয়ন কার্যক্রমে পরিবেশ সুরক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে; এবং পরিবেশের জন্য টেকসই এবং প্রাত্যহিক জীবনধারণের জন্য সাশ্রয়ী ও বিকল্প ব্যবস্থা প্রবর্তনে পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রমে নাগরিক অংশগ্রহণ এবং শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধন কর্মসূচীতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সনাক বাগেরহাটের অন্যন্য সদস্যবৃন্দ ও ইয়েস এর সদস্যগণ।